হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে গত ২৪ ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত টানা ২৪ ঘন্টার ভারী বৃষ্টিতে শীতকালীন আগাম সবজির ক্ষেত,রোপা আমনের ক্ষেত,মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। দোকান ও বিভিন্ন নীচু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছপালা উপরে পড়ে যাওয়ার খবর ও পাওয়া গেছে। সরেজমিনে বানিয়াচং উপজেলার বড়বাজার, সাউথপাড়া,তাম্বুলীটুলা,দাসপাড়া,পুরান তোপখানা, দত্তপাড়া, নাগেরখানা ও দরগা মহল্লা এলাকা ঘুরে দেখা যায় জলাবদ্ধতার কারণে বড়বাজার টু ৫/৬ নম্বর বাজার রাস্তার একাংশ তলিয়ে গেছে। পুরান তোপখানা গ্রামের রাস্তা তলিয়ে গেছে। নাগেরখানা গ্রামের রাস্তা ও দরগা মহল্লার রাস্তা তলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্ধী হয়ে পড়েছেন। বড়বাজার এলাকার বিভিন্ন দোকান ও আশপাশের নীচু বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার ৭০ হেক্টর রোপা আমন ও শীতকালীন আগাম সবজি ৫০ হেক্টরের মতো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শীতকালীন আগাম সবজির চাষ করা হয়েছিল পূর্বগড় এলাকার গাছের গুড়ি হাওর,হাসানপুর, দানিয়ালপুর,সমসপুর,নবীন্দপুর, রংশ্রী ও নবীপুর হাওরে। ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে ওই সমস্ত সবজির জমিতে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফসল রক্ষা করতে সবজি চাষীগণ সেচ মেশিন বসিয়ে অনবরত পানি সেচ দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। সমস্ত হাওরের রোপা আমন ধানের জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বিভিন্ন হাওরের বদ্ধ জলাশয় ও পুকুরের বাধ ভেঙে তলিয়ে যাওয়ায় মাছের ঘেরের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। শীতকালীন আগাম সবজি চাষী মঞ্জু ও আলিফ মিয়া জানান,টমেটো ও ক্ষীরা ক্ষেতে পানি জমে গেছে। দিন-রাত পানি সেচ দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারছিনা। আমাদের খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে আর পারবো না। মাছের ঘেরের রাসেল মিয়া জানান হোন্ডার হাওরের অনেক বিলে প্রাকৃতিক মাছের পাশাপাশি চাষের মাছ ছেড়েছিলেন। হাওরে পানি হঠাৎ করে অসময়ে বাড়ার কারণে তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার বোরহান আহমেদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ এনামুল হক জানান,সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো নির্ণয় করতে পারি নাই। শীতকালীন আগাম সবজি চাষীদের নিয়ে খুবই দু:শ্চিন্তায় আছি। রোপা আমন ৩ দিন পানিতে তলিয়ে থাকলেও সমস্যা হবেনা। এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্টদের সঙে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদেরকে সরকারিভাবে সহযোগীতা করা হবে।
নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নে বজ্রপাতে হাওরে কাজ করা অবস্থায় সাদি মিয়া (৪০) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে বজ্রপাতে সাদি মিয়া নিহত হন। সাদি মিয়া উপজেলার পানিউমদা ইউনিয়নের রুকনপুর গ্রামের মৃত গোল মোহাম্মদ এর পুত্র। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, প্রতিদিনের ন্যায় সাদি মিয়া হাওরে কাজ করতে যান। হঠাৎ করে বজ্রপাত শুরু হয়। বজ্রপাতের বিকট শব্দ শুনে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত অবস্থায় সাদি মিয়াকে উদ্ধার করে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সাদি মিয়ার মৃত্যুতে পরিবারসহ এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে । বজ্রপাতে নিহত বিষয়টি নিশ্চিত করেন নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাসুক আলী।
নবীগঞ্জ শহরের চৌদ্দ হাজারী মার্কেটে শুক্রবার সকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের প্রায় ৩০ মিনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি দোকান মালিকের। শুক্রবার (০৬ অক্টোবর ) সাড়ে ৬ টার দিকে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডে চৌদ্দ হাজারী মার্কেটের প্রথম দোকান মা ক্লথ স্টোর নামক একটি কাপড়ের দোকানে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। দোকানের স্বত্বাধিকারী সন্তোষ দেব এর বড় ছেলে পলাশ দেব জানান , এই দুর্ঘটনায় তার দোকানের প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। নবীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ দোকানটি ব্যবসায়ী, সাংবাদিক জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন পরিদর্শন করেন।