আজ ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনগুলোর মধ্যে একটি দিন হল নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস কখনোই উৎযাপিত হয় না। চলতি বছরেও মুক্ত দিবসে নেই কোনো অনুষ্ঠান বা আয়োজন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্ত দিবসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মান প্রদর্শনসহ নানা অনুষ্ঠান করা হয়। তবে নবীগঞ্জে এ দিবসে কোনো আয়োজন না থাকায় প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ঝেড়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পূর্বাকাশের সুর্যোদয়ের সাথে সাথেই মুক্তিযোদ্ধারা পাক-বাহিনীদের হটিয়ে দিয়ে মুক্ত করেছিলেন নবীগঞ্জ শহরকে। তিন দিনের সন্মুখ যুদ্ধের পর সেদিন সুর্যোদয়ের কিছুক্ষন আগে নবীগঞ্জ থানা সদর হতে পাকহানাদার বাহিণীকে সম্পূণরূপে বিতাড়িত করে মুহর্মুহ গুলি ও জয় বাংলা শ্লোগানের মধ্যে বীরদর্পে এগিয়ে আসে কয়েক হাজার মুক্তিকামী জনতা। এ সময় সাব-সেক্টর কমান্ডার মাহবুবুর রব সাদী নেতৃত্বে ও রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশীদসহ মুক্তযোদ্ধারা থানা ভবনে উত্তোলন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। পরে স্থানীয় নবীগঞ্জ ডাকবাংলো সন্মুখে হাজার হাজার জনতার আনন্দে উদ্বেলিত ভালবাসায় সিক্ত মাহবুবুর রব সাদী আবেগ জড়িত কন্ঠে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বর্নণা করেন এবং ওই দিন বিকালে মুক্তিবাহিনীসহ সিলেট রওয়ানা দেন। ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত হওয়ার পূর্ব থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। বিভিন্ন সময় পাকবাহিনীর উপর গেরিলা হামলা চালিয়ে তাদের ভীত সতস্ত্র করে রাখে মুক্তি সেনারা। কৌশলগত কারনে নবীগঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা নবীগঞ্জ থানা দখলের সিদ্ধান্ত নেয়। নবীগঞ্জে পাক বাহিনীর অন্যতম ক্যাম্প নবীগঞ্জ থানাকে লক্ষ্য করে তিনদিকে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। ৩ ডিসেম্বর রাত থেকে গুলি বিনিময় চলে উভয়ের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলগত কারনে ও আত্মরক্ষার্থে কখনোও পিছু হটা, আবার কখনোও আক্রমন চালিয়ে পাক বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে থাকে। সারাদেশে পাকবাহিনীর অবস্থান খারাপ হওয়ায় নবীগঞ্জেও তাদের খাদ্য এবং রসদ সরবরাহ কমে যায়। অন্যদিকে মুক্তিবাহিনী একেক সময়ে একেক দিক দিয়ে আক্রমন চালিয়ে যায়। ৪ ডিসেম্বর রাতে থানা ভবনের উত্তর দিকে রাজনগর গ্রামের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা রশিদ বাহিনী পাকবাহিনীর উপর প্রচন্ড আক্রমন চালায়। এ যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর কিশোর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা ধ্রুব ৪ ডিসেম্বর শহীদ হন এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন। পর দিন ৫ ডিসেম্বর রাতে নবীগঞ্জ থানায় অবস্থিত পাকবাহিনী ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা চরগাঁও ও রাজাবাদ গ্রামের মধ্যবর্তী শাখা বরাক নদীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থান নেয়। প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী প্রচন্ড যুদ্ধের পর শক্র বাহিনী পালিয়ে যায়। পরদিন ৬ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাকবাহিনীর নিকট থেকে কোন বাধা না আসায় মুক্তিবাহিনী বীরদর্পে জয়বাংলা শ্লোগানের মধ্য দিয়ে নবীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জ উপজেলাকে পাকিস্তান মুক্ত ঘোষণা করেন। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এই দিনটিকে পালনে নেয়া হয়না কোনো উদ্যোগ। স্বাধীনতার ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও মুক্তিযুদ্ধের বীরত্ব গাথা দিনটি পালনে কোনো আয়োজন না থাকার পেছনে উপজেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা রয়েছে বলে দাবী মুক্তিযোদ্ধা,জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের।
এ ব্যাপারে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী রশীদ বাহিনীর প্রধান মুর্শেদ জামান রশীদ বলেন, ৭১ এর নির্বাচনের পর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ভাষন ও নির্দেশনা পাওয়ার পর আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ি। এরপর টানা ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। এর আগে ৬ ডিসেম্বর কয়েক দফা গুলি বিনিময় শেষে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে আমরা নবীগঞ্জকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে নবীগঞ্জ স্বাধীন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর হয়ে গেলও নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস পালনে প্রশাসন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে যা অত্যান্ত হতাশা জনক। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার দাবী নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস পালনে যাতে প্রশাসনসহ সবাই এগিয়ে আসে এবং প্রতিবছর যাতে মুক্তদিবস পালন করা হয় এব্যাপারে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি। দিনারপুর কলেজের অধ্যক্ষ তনুজ রায় বলেন- ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মুক্ত দিবসটি পালনে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না, এটা প্রশাসনসহ সকলের ব্যর্থতা। আমাদেন দাবী ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস যথাযথ ভাবে পালনে যাতে প্রশাসন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করে। নবীগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র এটিএম সালাম জানান, স্বাধীনতার ইতিহাস অতি নির্মম, ৬ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে নবীগঞ্জকে মুক্ত ঘোষনা করা হয়। অত্যান্ত দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত নবীগঞ্জের এই মুক্তদিবস পালনে সরকারি বা বেসকারী ভাবে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় না। স্বাধীনতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য প্রতিবছর যদি সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারের জনপ্রতিনিধি, বেসরকারী বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক সংগঠন এই মুক্তদিবস পালনে উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তরুণ প্রজন্ম নবীগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মনে প্রাণে জ্ঞানে ধারণ করতে পারবে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপ কুমার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ মুক্ত দিবস। তবে আমাদের উপজেলায় আজ মুক্তদিবস উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠান নেই।
নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্য-নির্বাহী কমিটি ২০২৫ এর নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. ফজলুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- নির্বাচন কমিশনার ও হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রাসেল চৌধুরী ও নির্বাচন কমিশনার নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম এ আহমদ আজাদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোঃ ফজলুর রহমানের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী- নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি ২০২৫ এর নির্বাচনের বিভিন্ন পদে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) বেলা ১টা থেকে ৩টার মধ্যে প্রেসক্লাব ভবন হতে নির্ধারিত ফি দিয়ে সংগ্রহ করতে হবে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১টা হতে ৩টার মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ওই দিনই বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বেলা ১টা হতে ২টার মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা হতে ৩টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত। ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণা অনুষ্ঠানে অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম তালুকদার, সাবেক সভাপতি এসআর চৌধুরী সেলিম, আনোয়ার হোসেন মিঠু, এটিএম সালাম, দৈনিক বিবিয়ানার সম্পাদক ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল, মো. সরওয়ার শিকদার, মানবজমিনের স্টাফ রিপোর্টার এম এ বাছিত, সাবেক সভাপতি মুরাদ আহমদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া, মহিবুর রহমান চৌধুরী তছনু, সলিল বরণ দাশ, বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক শওকত আলী, নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ সুলতান আহমেদ, এম মুজিবুর রহমান, হাবিবুর রহমান চৌধুরী শামীম, সাধারণ সদস্য আবু তালেব, কিবরিয়া চৌধুরী, এটিএম জাকিরুল ইসলাম, ছনি আহমেদ চৌধুরী, সাগর আহমদ, ইকবাল হোসেন তালুকদার, শাহরিয়ার শাওন, আলাল মিয়া, অঞ্জন রায়, জুয়েল আহমদ, স্বপন রবি দাস প্রমূখ। তফসিল ঘোষণার পূর্বে সাংবাদিক মহিবুর রহমান চৌধুরী তছনুর দাদীর সুস্থতা কামনায় মোনাজাত পরিচালনা করেন সাংবাদিক শাহ্ সুলতান আহমদ।
নবীগঞ্জ উপজেলায় কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামে কিশোর মোস্তাকিন হত্যাকাণ্ডের ১১ দিন পর হত্যা মামলার প্রধান আসামী রায়হান উদ্দিন (২২) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৯। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাব-৯ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ মশিহুর রহমান সোহেল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। গ্রেফতারকৃত রায়হান উদ্দিন (২২) কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের পুরানগাঁও গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে। বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়- বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৯ সিলেট ও শায়েস্তাগঞ্জ ক্যাম্পের যৌথ অভিযানিক দল সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ দিকে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, হবিগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ক্রাইমসিন টিমসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করে। অন্যদিকে মামলার এজাহারে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে বলে বাদী দাবী করলেও প্রধান আসামী রায়হানের সঙ্গে এক নারীর পরকীয়ার বলি হয়েছেন মোস্তাকিন এমন গুঞ্জন এলাকার মানুষের মুখে-মুখে।